স্বচ্ছ জলে লুকিয়ে আছে শিক্ষার্থীদের কষ্ট - NEWS20 TV

Breaking

Home Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

Tuesday, 18 February 2020

স্বচ্ছ জলে লুকিয়ে আছে শিক্ষার্থীদের কষ্ট



ছবির মতো গ্রাম কাপ্তাইয়ের চিৎমরম। একদিকে স্বচ্ছ জলের কাপ্তাই লেক, আরেকদিকে সবুজ পাহাড়। যেন মিলেমিশে গড়েছে এক স্বপ্নরাজ্য।কাপ্তাই বাজারের সামান্য আগেই চিৎমরম ঘাট। ঘাটের ওপারেই গ্রাম। নৌকায় ওঠানামাই ১০ মিনিট। টলমলে স্বচ্ছ জল কেটে ছোট নৌকাগুলো এপার থেকে ওপারে যায়।ঘাটে নেমেই বাজার। হালকা শীতের আমেজে একটু চা পান করলে হয়তো মন্দ হতো না। হঠাৎ দূরে চোখ আটকে গেল। লাল সোয়েটারে মিষ্টি মিষ্টি চেহেরার কয়েকজন স্কুলশিক্ষার্থী এদিকেই আসছে।পাড়ে নামতেই চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বললাম ‘ইস্কুলোত যজ্জেনা তোঁয়ারা’ (তোমরা কি স্কুলে যাচ্ছ)। চোখ পিট পিট করে লাজুক দৃষ্টিতে তাকাতেই পেছন থেকে একজন আদিবাসী লোক বলে উঠলেন ‘বাবু কি জিগ্যিয়ার কওছেনা’ (বাবু কি বলছে, তার উত্তর দাও)।

একে একে সবার নাম জানলাম। মারমা ভাষার নামের সঙ্গে ডাকনাম হিসেবে একটি বাংলা নামও জোড়া আছে। সেই নামেই সম্বোধন করলাম। জানলাম তারা এ গ্রামের নয়, এসেছে পাশের ব্যাঙছড়ি থেকে।
কথা হলো পড়ালেখা নিয়ে। তারা জানাল, স্কুলের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী আসে পাশের পাহাড়ি গ্রামগুলো থেকে। পাহাড়ি গ্রাম তাই নামগুলোতে আদিবাসীদের জীবনধারার মতো আছে বৈচিত্র্য।জামানছড়ি, চাকুয়াপাড়া, চংড়াপাড়া আরো কয়েকটি গ্রামের নাম বলে গেল ছোট্ট রূপা। স্কুল যাওয়ার তাড়া, তাই তাদের ছেড়ে দিলাম। যাওয়ার আগে তাদের সঙ্গে আসা সেই অভিবাবক থেকে স্কুলের এক শিক্ষকের মোবাইল নাম্বার চেয়ে নিলাম।সময় গড়াতেই দেখলাম চারপাশে ছোট ছোট নৌকা। কয়েকজন শিক্ষার্থী দোতলা ইঞ্জিন নৌকায় আসছে। দোতলা নৌকাটি থামতেই কাছে গেলাম।দেখেই বুঝলাম এ শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক স্তরের। কয়েকটি ছবি তুলে নিলাম। তবে এ দৃশ্য দেখতে যতটা সুন্দর দেখায় তা যে তাদের জন্য সুখকর নয়, বুঝলাম কথা বলে।স্কুলশিক্ষার্থী প্রু মারমা জানাল, স্কুল শুরুর অনেক আগেই ঘর থেকে তারা বেরিয়ে পড়ে। পাহাড়ের উঁচু-নিচু পথ হাঁটার পর ঘাটে এসে নৌকায় উঠে।প্রতিদিন তারা স্কুলে নৌপথে যাতায়াত করে। কিন্তু কারো গায়ে নেই কোনো লাইফ জ্যাকেট। তাকে প্রশ্ন করতেই যা ভেবেছিলাম তাই বলল, সাঁতার জানি তবুও কেন জানি ভয় লাগে। সময়মতো স্কুলে পৌঁছানোর জন্য মানুষ বেশি হলেও নৌকায় উঠে পড়ি।আরো জানতে ফোন দিলাম চিৎমরম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবের মুঠোফোনে।
এ প্রসঙ্গ উঠতেই তিনিও বললেন সেই শঙ্কার কথা। বললেন, বিভিন্ন ছোট ছোট পাহাড়ি গুচ্ছ গ্রাম থেকে শিক্ষার্থীরা এই বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করে। লেকের মধ্যে নৌপথেই তাদের যাতায়তের একমাত্র মাধ্যম। ছোট ছোট ছাত্র-ছাত্রীর অনেকে সাঁতার জানে না। পারাপারে স্কুলের নিজস্ব কোনো বোট নেই। তাই ভাড়া দিয়ে আসতে হয় স্কুলে। পাহাড়ি বেশিরভাগ পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো নই। নিজস্ব বোট থাকলে বিনা ভাড়ায় তাদের স্কুলে আনা যেত।স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকসহ হালকা খাবার খেলাম বাজারের দোকানে। এরপর পা বাড়ালাম নিজের গন্তব্যে।কয়েকজন বললেন, দেশের কত শিক্ষার্থী পড়াশোনা করতে  বিদেশে পাড়ি দেয়। আবার কেউ নামিদামি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ছে কত টাকা খরচ করে। কিন্তু এদের একটা সামান্য বোট বা লাইফ জ্যাকেটেরও ব্যবস্থা নেই। অথচ গত ১৪ ফেব্রুয়ারি এ লেকেই বোটডুবির ঘটনায় শিশুসহ মারা গেছে ৫ পর্যটক।

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here

Pages